Home » স্বজন বাসের কেউই খবরও নেয়নি রাজীবের

স্বজন বাসের কেউই খবরও নেয়নি রাজীবের

কর্তৃক W3zN1eHJfkU
0 মন্তব্য 413 ভিউজ

হাসপাতালে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেন। আত্মীয়রা তাঁর চিকিৎসা নিয়ে দিশেহারা। অথচ ঘাতক যেই বাস, সেই স্বজন বাসের কর্তৃপক্ষেরই কোনো খবর নেই। বিআরটিসি ও স্বজন এই দুই বাসের রেষারেষিতে ডান হাত হারান রাজীব হোসেন।

রাজীব হোসেনের চিকিৎসা ব্যয় ওই দুই বাস মালিককে বহন করতে গতকাল বুধবার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ নির্দেশ দেন। রুলে ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হাত হারানো রাজীব হোসেনকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালতের এই আদেশের পর বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ রাজীবের খোঁজ নিলেও আরেক বাস স্বজনের কোনো কর্তৃপক্ষ রাজীবের কোনো খবরই নেয়নি।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বলছিলেন যত দূর শুনেছি বিআরটিসি বাসের গেটে দাঁড়িয়ে ছিল রাজীব। এ সময় পেছনে থাকা স্বজন বাসটি বিআরটিসি বাসকে ওভারটেক করতে যায়। এতেই রাজীবের হাত চাপা পড়ে। পরে তাকে হাত হারাতে হয়। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি দোষ স্বজন বাসের। অথচ ওই বাসের কেউ এখন পর্যন্ত আসেন নি। খবরও নেয়নি। তবে বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষ রাজীবের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি বাসের অপারেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আমরা রাজীবের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা তাঁর খালার হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি দাবি করেন তাঁদের বাসের দোষ ছিল না। তাদের বাসটি দাঁড়িয়েই ছিল। স্বজন বাসটি এসে তাদের বাসকে ওভারটেক করার সময় রাজীবের হাত চাপা পড়ে। এতেই হাত হারায় তিনি। মনিরুজ্জামান বলেন, আদালতের আদেশ শুনেছি। আমাদের হাতে সেই আদেশ এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ মতো তারা কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

স্বজন বাসের বিষয়ে এখনো কোনো খবর পায়নি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রাজীবের হাত হারানোর ঘটনা শোনার পর স্বজন বাসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। গতকাল তাদের কার্যালয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কাউকে পাইনি। আজও এখন পর্যন্ত ওই বাসের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে আজ রাজীবের চিকিৎসা নিয়ে সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান শামসুজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে আলোচনায় বসেন চিকিৎসকেরা। পরে শামসুজ্জামান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সেরা চিকিৎসকদের নিয়ে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আমরা তাকে সিটি স্ক্যানের পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ওই ফলাফলে দেখা গেছে তার মাথায় আঘাত রয়েছে। দুর্ঘটনার পর তাঁর মাথার খুলিতে ফাটল ধরেছে। চোখের পেছনে মস্তিষ্কে পানি ও রক্ত জমেছে। এ জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে। যদি তাতে না সারে তাহলে অপারেশন করতে হবে। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ড্রেসিংয়ের জন্য রাজীবকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। তাঁকে উন্নত মানের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বহন করছে। এ ছাড়া বাড়তি যেসব খরচ হচ্ছে, তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছেন।

এর আগে গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজীব হোসেনকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১২টার পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে সেখান থেকে বের করে সিটি স্ক্যান করেন চিকিৎসকেরা।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম বলেন, ‘গতকাল রাজীব পানি ও জুস খেয়েছিল। কিন্তু আজ কথাও বলছে না, কিছু খাচ্ছে না। আমি অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।’

সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারানো রাজীব হোসেনের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ ছাড়া রাজীব সুস্থ হলে তাঁকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনের চিকিৎসা এবং তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে যান মোহাম্মদ নাসিম। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাজীবকে দেখার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নাসিম বলেন, রাজীব সুস্থ হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে, তাঁর হাত পুনঃস্থাপন করা যাবে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

রাজীব হোসেনের হাত হারানোর ঘটনায় গতকাল দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন বাসের চালক খোরশেদ। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজীবের হাত হারানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুই চালককে হাজতে পাঠানো হয়েছে।

0

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন