উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সাম্প্রতিক চীন সফরকালে তাঁর পাশে এক নারীকে দেখা যায়। তাঁকে নিয়ে বিশেষ করে চীনাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও নজর কাড়েন তিনি। তাঁর সম্পর্কে নানা আঙ্গিকে সচিত্র খবর বেরিয়েছে। এসব খবরের বদৌলতে ‘রহস্যময়ী’ নারীর তকমা পেয়েছেন তিনি।
কিমকে নিয়ে বহির্বিশ্বের মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তাঁর অঙ্গভঙ্গি থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপের চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। হঠাৎ বেইজিংয়ে গিয়ে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। চীনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একরোখা এই তরুণ রাষ্ট্রনায়কের পাশে যখন ‘স্মার্ট’ এক নারীকে দেখা গেল, তখন কৌতূহল আরও বাড়ে। সবার অবাক প্রশ্ন, কে এই নারী?
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে জানা যায়, বেইজিংয়ে কিমের পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
উত্তর কোরিয়ার নেতার মতো দেশটির ফার্স্ট লেডিরও বিশ্বমঞ্চে পদচারণ বিরল। তবে দুজনকে দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কিম ও তাঁর স্ত্রী এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পা রাখলেন। আর এ দফাতেই স্বামীকে ছাপিয়ে গেলেন স্ত্রী।
চীনারা কিমের চেয়ে তাঁর স্ত্রীর বিষয়েই বেশি মনোযোগী ছিলেন। তাঁর রুচিবোধ, পোশাক–পরিচ্ছদ, স্টাইল চীনাদের মন জয় করে নিয়েছে। বেইজিং সফরকালে তাঁকে অন্তত তিন ধরনের পোশাকে দেখা গেছে। উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডির রুচিশীলতায় মুগ্ধ হয়ে চীনারা যোগাযোগের সামাজিক মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘ফার্স্ট লেডি সত্যিই সুন্দরী, খোশমেজাজি।’
হংকংয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার উইলিয়াম ট্যাং ট্যাট চাই সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছেন, কিম জং–উনের স্ত্রীর পোশাকজ্ঞান সূক্ষ্ম।
কে এই নারী
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, তাদের নেতার স্ত্রীর নাম রি সোল জু। তবে ফার্স্ট লেডির এই নামটি সত্যিকারের কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১২ সালে রি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের স্ত্রী হিসেবে প্রথম পরিচিতি পান। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক (অফিশিয়াল) তথ্য নেই।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, রি উত্তর কোরিয়ার একটি এলিট পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবা অধ্যাপক। মা চিকিৎসক। রির জন্ম ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে। যার অর্থ—তাঁর বয়স ২৮ থেকে ৩৩ বছর।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, রি চীনে সংগীত বিষয়ে পড়েছেন। এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের সময় উত্তর কোরিয়ার চিয়ারলিডিং দলের সদস্য হয়ে ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছিলেন তিনি।
রি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। দেশেও তিনি সচরাচর জনসমক্ষে আসেন না। প্রায়ই অন্তরালে চলে যান। তাঁর যেসব ছবি পাওয়া যায়, তাতে তিনি পরিশীলিত ও হাস্যোজ্জ্বল।
কবে বিয়ে
স্ত্রীকে নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা উত্তর কোরিয়ার নেতাদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিমের বাবার একাধিক স্ত্রী ছিল। তিনি কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের পরিচিত করেননি।
কিমের সঙ্গে রির কবে কোথায় কীভাবে দেখা হলো, তাঁদের বিয়ে—এসব বিষয়ে অস্পষ্ট বা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
কেউ কেউ বলেন, ২০০৯ সালে রিকে বিয়ে করেন কিম। আবার এমন ভাষ্যও আছে, ২০১০ সালে এক ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক কনসার্টে দুজনের প্রথম দেখা। তারপর বিয়ে।
বিয়ে যখনই হোক না কেন, ২০১২ সালের জুলাইয়ে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রথম বলা হয়, তিনি (রি) কিম জং–উনের স্ত্রী। নাম কমরেড রি সোল জু।
কিম-রি দম্পতির তিন সন্তান আছে বলে ধারণা করা হয়।
কেটকে অনুকরণ
ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন তাঁর স্টাইলের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর প্রভাব উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বলে অনুমান করা হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি রি তাঁর স্টাইলের ক্ষেত্রে কেটকে গভীরভাবে অনুকরণ করেন। কেটের সঙ্গে রির পোশাক–আশাকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি চীন সফরকালে রি যে পোশাক পরেছিলেন, তাও কেটের পোশাকের সদৃশ।
রি পশ্চিমা ধাঁচের ফ্যাশনের জন্য পরিচিত। তাঁর ব্যবহার্য দেখে মনে হয়, তিনি পশ্চিমা ফ্যাশন সম্পর্কে ভালোই খোঁজখবর রাখেন। তা ছাড়া তিনি ফ্যাশনে দামি জিনিস ব্যবহার করেন। এ নিয়ে অবশ্য তাঁর সমালোচনা আছে।
কম যান না রি
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ফার্স্ট লেডিরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তাঁরা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন। উত্তর কোরিয়া নিভৃতচারী দেশ। সে হিসেবে দেশটির ফার্স্ট লেডির নাম শোনা যায় না বললে চলে। তবে এবার চীন সফরে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি রি নিজেকে চিনিয়েছেন।
বেইজিংয়ে কিমের সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়েছেন রি। এসব অনুষ্ঠানে তাঁকে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ও সাবলীল মনে হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে কিম ও রি গ্রুপ ছবিতে অংশ নিয়েছেন। এই ছবি দেখে অনেকে মন্তব্য করেছেন, চীনা ফার্স্ট লেডির চেয়ে উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডিই বেশি স্মার্ট।
রিকে পর্যবেক্ষণ করে দক্ষিণ কোরিয়ার স্টাইলিস্ট কিম ময়োংহি বলেছেন, পশ্চিমা দেশের ফার্স্ট লেডিদের চেয়ে উত্তর কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কোনো অংশে কম নন।
কিমের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রি। কেউ কেউ তাঁকে কিমের ডান হাতও বলেন। কূটনীতিতে তিনি দারুণ করবেন বলেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ। রির প্রতি মুগ্ধ হয়ে এক চীনা নাগরিক যোগাযোগের সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি বলতে পারি, ফার্স্ট লেডি কূটনীতিতে তিনি ভালোই করবেন। অন্তত কিমের বোনের চেয়ে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের বৈঠক হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বৈঠক উপলক্ষে রিকে হয়তো আরও জানার সুযোগ হবে।